আমার বন্ধু চঞ্চল সাহা যার সাথে পরিচয় হয় ২০০৬ সালে যখন আমি মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশনে পাস করি।বন্ধুত্বের মাঝে ছিল দুজনের পরিচিত মামনুর রসীদ ।
করোনেশন স্কুল থেকে আমি চলে আসি দেবীনগর কৈলাস চন্দ্র রাধারাণী উচ্চবিদ্যাপীঠ এ । সায়েন্স গ্রুপ এ ভর্তি হওয়ার দরুন চঞ্চল সাহা র সাথে আমার সখ্যতা বাড়ে । যার দরুন আমি ওর বাড়ীতে যাতায়াত শুরু করি । ওদের বাড়ীর পরিবেশ আমার ভালোলাগে তাই আমার যাতায়াত বেড়ে যায় যা সারাদিনে ৩ থেকে ৪ বারও হয়ে যেত ।
চঞ্চল দের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকার জন্য ওর মা প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন । প্রাইভেট এর মধ্যে ছিল গুদু , সীমা , অনূপ শূরের ভাস্তি আর চঞ্চল পড়াত প্রিয়াঙ্কা আর সোনামনি কে । প্রিয়াঙ্কা হল চঞ্চল এর বোন আর সোনামনি হল গুদু , সীমা এর দিদি । চঞ্চল যখন পড়াত তখন মাঝে মাঝে আমিও চলে যেতাম , পড়াতে পড়াতে বোরিং ফিল করলে আমিও দেখিয়ে দিতাম ।
২১ শে জুন,২০০৬ যে দিন আমি সোনামনি ওরফে টুপু কে দেখি । পড়াতে পড়াতে অনেক ইয়ার্কি ফাজলামি হত , আমি তা কোন দিনও মনে করিনি , কিন্ত টুপু সেটা অন্য রূপে দেখতে থাকে । এর আভাস আমাকে দেয় প্রিয়াঙ্কা । প্রিয়াঙ্কা আমাকে বলে যে " টুপু নাকি আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চায় " । আমি এই কথা শুনে অবাক কারণ আমি টুপু কে সেই নজরে কোন দিনও দেখিনি । ধীরে ধীরে প্রাইভেট পড়ানো যে প্রেমে পরা হয়ে যাবে কে জানে ?
টুপু র কাকু নাড়ু পাল গঙ্গারামপুরের মেয়ে পিয়ালী র সাথে পালিয়ে বিয়ে করে । যার জন্য ওদের বাড়ীতে পারিবারিক অশান্তি শুরু হয় ।
বালুরঘাটে অবস্থিত বোল্লা কালির মেলাতে যাওয়ার প্ল্যান হয় চঞ্চল দের বাড়ীতে , প্ল্যান মাফিক চঞ্চল এর মা , বোন , টুপু , টুপু র কাকু-কাকীমা আর আমি । পরের দিন আমি আমার মাকে মিথ্যা কথা বলে সকাল ১০ টার সময় চঞ্চল দের বাড়ীতে উপস্থিত হই । চঞ্চল এর মা , বোন , টুপু , টুপু র কাকু-কাকীমা রিক্সা করে আর আমি ও চঞ্চল সাইকেলে বাসস্ট্যান্ডে যাই । বাসস্ট্যান্ডের থেকে উঠলাম বালুরঘাটের গাড়িতে । একদম পিছনের সিটে বাম সাইডে চঞ্চল এর মা , তারপর চঞ্চল এর বোন , তারপর বসেছিল টুপু । তার আগের সীটে টুপু র কাকু-কাকীমা , আমি আর চঞ্চল ছিলাম দাঁড়িয়ে । টুপু র সামনে যখন দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন ওর পায়ে বার বার করে চাপা দিচ্ছিলাম । আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম বাসস্ট্যান্ড থেকে টানা কালিয়াগঞ্জ । তারপর কালিয়াগঞ্জ থেকে সিট পাই । গঙ্গারামপুর আর বুনিয়াদপুরের মাঝে অবস্থিত তাঁতের কাপড়ের মিলের সামনে গাড়ীর টায়ার পাম্পচার হয় , সবাই মিলে তাঁতের কলে ঢুকে কীভাবে কাপড় বানানো হয় তা দেখলাম , এই প্রথম আমি অন্য কারো সাথে গঙ্গারামপুর গেলাম । গঙ্গারামপুরে অবস্থিত নার্সিংহোম এর পাশ দিয়ে গেলাম টুপু র কাকীমার বাপের বাড়ীতে । টুপু র কাকীমার বাপের বাড়ীতে টিফিন সেরে গেলাম স্নান করতে ওর কাকীমার আত্মীয়ের বাড়ীতে , এই প্রথম অন্য কারো বাড়ীতে স্নান করা আর কাপড় চেঞ্জ করা । তার পর গেলাম দরগা আর কালদিঘী ঘুরতে । সন্ধ্যা ৬ টা র সময় বাসে করে গেলাম বোল্লাকালীর উদ্দেশ্যে । ওখানে টুপু র বাবার মামা বাড়ী যেখানে রাত্রে আমরা ছিলাম । সন্ধ্যা ৮ টায় মেলার ভীড়ে ঠাসাঠাসি তবুও সবাই মিলে মেলা ঘুরলাম , চঞ্চল এর মা , টুপু র কাকীমা এরা সবাই বোল্লাকালীকে ভোগ দিল । রাত্রে খাওয়া দাওয়া সেরে আমি , টুপু , চঞ্চল , প্রিয়াঙ্কা ছাঁদে উঠে মেলা দেখলাম । একটা ছেলে মোবাইলে ছবি তুলছিল , যেটা টুপু র ভালোলাগেনি । ছাঁদে কিছু ছেলের সাথে চঞ্চল তাস খেলছিল , আমার ভাল লাগছিল না তাই আমি চঞ্চল এর মার পাশে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি । পরে কখন যে চঞ্চল আমার পাশে ঘুমিয়ে পড়েছিল তা আমার মনে নেই । সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি , টুপু , প্রিয়াঙ্কা আবার মেলায় ঘুরতে বেরই । আমি টুপু আর প্রিয়াঙ্কা কে কাঁচের দুটি ঘর কিনে দিই । আবার ১০ টা নাগাদ আমরা রায়গঞ্জ এর গাড়ী ধরি , এবার আমি , চঞ্চল , প্রিয়াঙ্কা আর ছিল চঞ্চল এর মা । আমাদের সাথে আসেনি তাই আমার খারাপ লাগছি।
এইভাবে চলছিল আমাদের প্রেম ।
১ লা জানুয়ারী , ২০০৭ আজ চঞ্চল দের বাড়ীতে পিকনিক এর প্রোগ্রাম । আমিও পার্টিসিপেট করি , ওখানে ছিল টুপু আর প্রিয়াঙ্কা দের পরিবারের সবাই । টুপু র বাবা শ্যামপুরের দোকান থেকে সন্ধ্যা ৭ টার সময় আসে । সবাই রান্নাতে ব্যস্ত কিন্ত টুপু আর প্রিয়াঙ্কা ঘরের মধ্যে কি যেন করছিল । আমি আগে থেকেই একটা বড় গ্রীটিংস কার্ড টুপু র জন্য কিনে রেখেছিলাম । সেটা টুপু কে দিলে সে নিয়ে নেয় । পিকনিক সেরে বাড়ী ফিরতে রাত ১০ টা বেজে যায় ।
২ রা জানুয়ারী , ২০০৭ আজ চঞ্চল দের বাড়ীতে সন্ধ্যা ৭ টার সময় গেলে পরে টুপু গ্রীটিংস কার্ডটা দিয়ে দেয় । আমি রাগের চোটে গ্রীটিংস কার্ডটা ছিঁড়ে ফেলি আর বাড়ীতে চলে আসি ।
৩ রা জানুয়ারী , ২০০৭ আজ টুপু আমাকে বলে সে আমার সাথে কোন যোগাযোগ রাখতে চায় না । আমি শুনে খুব খারাপ অনুভব করলাম ।
প্রায় একমাস পরে প্রিয়াঙ্কা র মাধ্যমে টুপু আমাকে বলে সে রাজী । বাস আমাকে আর পায় কে ?
তারপর থেকে সপ্তাহে দুবার করে টুপু দের বাড়ীতে যেতাম , চঞ্চল দের বাড়ীতে যাওয়ার ফাঁকে ।
৫ ই সেপ্টেম্বর , ২০০৭ আজ টুপু কে চঞ্চল দের বাড়ীতে প্রোপোজ করি ।
টুপু সেই সময় বুড়া দার কাছে প্রাইভেট পড়ত , টুপু আমাকে বলত বুড়া দা প্রাইভেট ভালো পড়ায় না । তাই আমি টুপু কে বলি এর পরের বছর মাস্টার পাল্টাতে ।
একদিন টুপু র কাকীমা আমাকে বলেই ফেলল যে ওদের বাড়ীতে অত যেতে না কারণ লোকে খারাপ বলবে । আমার কথাটা শুনে খুব খারাপ লাগলো , আমি তারপর টুপু দের বাড়ীতে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম । কিন্ত মাসে একবার করে টুপু দের ঘরে যেতাম ।
আমি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে মালদায় ভর্তি হই , মালদায় থাকার জন্য প্রতিদিন আর টুপু র সাথে দেখা করা সম্ভব হত না ।
২৭ শে আগস্ট , ২০০৮ আজ টুপু কে প্রথম একটা সাবান দিলাম যাতে আমি গণেশ এঁকেছিলাম ।
১৯ শে ফেব্রুয়ারী , ২০০৮ আজ টুপু কে দ্বিতীয় সাবান দিলাম যাতে আবার ও আমি গণেশ এঁকেছিলাম ।
৪ ঠা এপ্রিল , ২০০৮ আজ টুপু আমাকে ওদের ফোন নাম্বার ৯৬৩৫৮১৯৯২৯ থেকে প্রথম ফোন করে ।
৮ ই জুন , ২০০৯ আজ টুপু আমাকে প্রিয়াঙ্কা র মাধ্যমে বলে পাঠায় যে ওদের বাড়ীতে গিয়ে জীবন বিঞ্জানের ছবি আঁকতে হবে , আমি যথারিতী সকাল ১০ টায় টুপু দের বাড়ীতে যাই , ওর বাবা ও মা পাঁকা ঘরে ছিল । টুপু আমাকে বলল যে টিনের ঘরে গিয়ে ছবি আঁকাতে , আমি ওর কথা শুনে চলে গেলাম টিনের ঘরে । ১০ গ্রাম (টুপু র কাকীমার মেয়ে) তখনও ঠিকমতো কথা বলতে বা হাঁটতে পারত না । টুপু বেশীর ভাগ সময় ১০ গ্রামকে কোলে নিয়ে রাখত । আমি কিন্ত জীবন বিঞ্জানের ছবি আঁকছি , এ দিকে টিনের ঘরে টুপু এসে বার বার করে ছবিগুলি দেখতে থাকে । হঠাৎ করে টুপু আমার কাছে এসে আমার ঠোঁটে চুমু খায় , ওর কোলে ছিল ১০ গ্রাম । আমি কিছুই ভাবতে পারছিলাম না । চুমু খাওয়া মাত্র ও আবার পাঁকা ঘরে চলে যায় । আমি ছবি আঁকা বাদ দিয়ে ভাবলাম এ কি হল ? মনে মনে ঠিক করি টুপু একটা মেয়ে হয়ে যদি চুমু খেতে পারে তবে আমি কেন পারবনা ? আমিও টুপু র আপেক্ষায় বসে আছি । টুপু আবার টিনের ঘরে আসা মাত্র আমিও টুপু র ঠোঁটে চুমু খাই । তারপর আমি আর ছবি না এঁকে টুপু দের বাড়ী থেকে সোজা আমাদের বাড়ীতে চলে আসি ।
টুপু তখন ক্লাস ৯ এ পড়ত , আর প্রাইভেট মাষ্টার হিসাবে শিবু দার কাছে পড়া শুরু করে । নামসংঘ ক্লাবের পাশের গলি দিয়ে শিবু দার বাড়ীতে যেত । এই সময়গুলিতে টুপু র সাথে ফোনে আমার প্রায়ই কথা হত । সে সময় আমি জানতাম টুপু র পড়া কি কি বার আছে ? সেই দিন অনুযায়ী আমি মালদা থেকে বাড়ী আসতাম । টুপু র পড়া যদি বিকাল ৫ টা থেকে হত তবে আমি ৪.৩০ মিনিটে নামসংঘ ক্লাবের পাশের গলিতে উপস্থিত থাকতাম । আমি তখন নোকিয়া ৫২২০ এক্সপ্রেস মিউজিক মোবাইল ব্যবহার করতাম ।
১২ ই জুন , ২০০৯ আজ টুপু কে আমি দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলাম । মিঠুন দার বাড়ীর সামনে যে মোড় আছে ঠিক সেখানে । উপরের ছবিটা সেদিনকার তোলা ।
১৪ ই সেপ্টেম্বর , ২০০৯ আজ টুপু কে একটা সাদা রঙের চুরিদার দিয়েছিলাম । মালদার নেতাজী মার্কেট থেকে বিভিন্ন দোকান ঘুরে এই চুরিদার কিনেছিলাম ৬৫০ টাকা দিয়ে । এই চুরিদারটা একবার দেখেই আমার পছন্দ হয়েছিল ।
No comments:
Post a Comment