গতকাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে । আর
ভাল লাগে না পড়তে । কবে যে শেষ হবে এই পড়াশোনা ? নিজের বিবেকের কাছে নিজেই শুধাই ।
আমি জানি প্রতি দিনের মত আজও এই দিন চলে যাবে ,
চলে যাবে হয়ত কোন নতুন ছাপ ফেলে ।
সারাদিন নেই কোন কাজ , বিকেল বেলায় সেই মালদা
কলেজের বইমেলা দেখা , আর তার সাথে নতুন কোন সুন্দরী মেয়ের খোঁজ । আজও কি সেই দিন
আছে , সেই নতুন মেয়ের পিছন পিছন তার বাড়ী যাওয়া । তার স্কুল যাওয়ার সময় গোনার ।
আর ভাল লাগে না এসব কিছু , জীবনে শুধু শান্তি
চাই । বিরহের কান্না তো অনেক হল , এবার না হয় ক্যারাম সিনেমার মত সত্যিকারের প্রেম
বিজ্ঞান খেলা উচিত ।
সারাদিনের পরিশ্রমের
পর আবার দুটো ছাত্রী পড়ানো । খাওয়া দাওয়া সেরে রাত্রে আবার সেই ফেসবুক ।
এইভাবেই কি আমার জীবন চলবে ? এই চলন্ত ট্রেনের
কি কোন স্টেশন আসবে না ? কেউ কি আমায় নিজের মত করে আদর করবে না ? কেউ কি আমায় ফোন
করে জিজ্ঞাসা করবে না “ কেমন আছ ” ?
থাক না ওসব কথা । ঘুমের ঘোরে আজও তোমার স্বপ্ন
দেখি , আবছা আলোয় তুমি যেন কোথায় মিলিয়ে যাচ্ছ । হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গে । মা ফোন করেছে ,
কি রে বাড়ি কখন আসবি ? চোখ ডলতে ডলতে ভাবি এই তো একটু পরেই টিউশন পড়িয়েই , কিন্ত
ভাবাটা মুখে প্রকাশ হল কই ? ফোনের চার্জ শেষ ।
মা , মাগো আমি আসছি । তুমি আমার পছন্দের খাবার
তৈরি করে রেখ ।
তথৈবচ করে ফিরে আসি টিউশন ছেড়ে । দরজার কড়া
নাড়ে , কে ? দাদা আপনার পার্সেল ছিল । যত্তসব ঝামেলা এখনই । কই দেন ?
আর দেরি করা যাবে না , বেড়িয়ে পড়ি ।
আমিতো রোজই বাসে বাড়ি ফিরি , কিন্ত আজও কি
অন্যদিনের থেকে আলাদা ? কানে হেডফোনে গান চলছে “ চল ছাইয়া ছাইয়া ছাইয়া ” , এ যেন
সেই শারুখ খানের সুটিং এর মত । কত শত স্বপ্ন এই রাস্তায় বিলীন হয়ে গেছে , কিন্ত
কেইবা তার খবর রাখে ?
এমা আজও তো সেই দিন , মানে বৃহস্পতিবার , টুপুর
টিউশনে যাবার দিন । আজও কি সে যাবে ? মনের মধ্যে শান্ত শীতল বাতাস বয়ে যায় । মনে
পড়ে সেই বিগত তিন বছরের স্মৃতি ।
ঘুরে ফিরে সেই একই
প্রশ্ন , সে কি আজও ভাল আছে ?
বাড়ীতে আসলে আমার মন
টিকতে চায়না , শরীর এখানে থাকলেও মন পড়ে থাকে ওদের পাড়ার গলিতে । যদি ও বাড়ীতে
থাকে ? আমি যদি ওকে দেখতে পাই ? ও দেখতে কেমনি বা হয়েছে ? ওর ছেলে মেয়েরাই বা কত
বড় হয়েছে ?
আমি কি তাকে আজও ভালবাসি , নাকি এ আমার কল্পনা
?
ঠান্ডাটা
আজ একটু বেশিই মনে হয় । তবুও থেমে থাকি না , সেই পনের বছরের পুরনো হিরো সাইকেল , আমার
সারাদিনের সাথী , আমার সঙ্গ দেয় । সমস্ত পেশী শক্তির জোরে পৌঁছে যাই গন্তব্যস্থলে
। কিন্ত কই সেই হারান দিন ? কই সেই মিষ্টি মাখা হাসি মুখ ? সবই কি এই ঠান্ডায় জমে
গেছে ?
তবুও আমি দমিবার নই , ওদের পাড়ায় ঢোকা বারণ ,
তাই বলে কি আমি অন্য কোথাও তো যেতে পারি । হায় ! এ পোড়া কপাল ।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান এক গতিশীল বিজ্ঞান , হ্যাঁ তাই
তো , যাই না একবার সেই সমর দার কাছে ? ওর কাছেই তো টুপু পড়তে আসত । আমার হিরোর বয়স
হয়েছে , আমার শরীরের মত ওর শক্তি নাই , জং পড়ে ওর সমস্ত কলকব্জা কমজোর হয়ে গেছে ।
মাঝে মাঝে আর্তনাদ করে ওঠে , যেন বলছে আমি আর পারছি না , আমার বেঁচে দে ওই
শুভাষগঞ্জের ভাঙ্গাচোরার দোকানে ।
আমার শরীরে পরিশ্রমের ঘাম ঝরছে । এই তো সেই
বাড়ী , আর ওই তো বেগুনী রঙের সাইকেল । আজও হয়ত টুপু পড়তে এসেছে ?
সাইকেলের বেল পুরনো হলেও আওয়াজ একদম নতুন , এই
তো গতবার এসে তেল দিয়েছিলাম । ক্লিং ক্লিং আওয়াজ , আর ঝোড়ো গতি , যদি একটি বার
ঘরের জানলা সরিয়ে ও দেখে । রাস্তার মোড়ে আধঘণ্টা কাটিয়ে , দূর থেকে দেখতে পাছি ওই
বেগুনী সাইকেল নিয়ে টুপুর মত কেউ এগিয়ে আসছে ? আমার চুল ঠিকঠাক করি , আর একটু আগে
গিয়ে দাঁড়াই । ছিঃ ! এখানে তো আলো নেই কি করে ও আমায় কি করে দেখবে ? আর একটু আগে
এগিয়ে দাড়াই ।
কিন্ত একি , এতো সেই টুপু নয় । এতক্ষণে আমার
ভুল ভাঙ্গে , আমি এতক্ষণ যা ভাবছিলাম সবই আমার ভাবনা , আসলে এগুলি আমার কল্পনা ।
সে যে আজ অন্য কারও হয়ে গেছে , সে এখানেই বাঃ আসবে কি করে ?
No comments:
Post a Comment